Ad Code

Responsive Advertisement

প্রথম প্রান্তিকে খরচ ৫৫৪ কোটি টাকা

মেট্রোরেল

করোনার ধাক্কা সামলে এগিয়ে চলছে রাজধানীজুড়ে তিনটি মেট্রোরেলের কাজ। একইসঙ্গে মেট্রোরেলের আরও দুটি ছোট লিংকও তৈরি হচ্ছে। এসব প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ খাতে বরাদ্দ আছে ৭ হাজার ২৪৪ কোটি ৮ লাখ টাকা। গড় ব্যয়ের হার দাঁড়িয়েছে বরাদ্দের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে মেট্রোরেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৭৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। শুরু থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি ফাস্টট্র্যাক অগ্রগতি প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

যথাসময়ে এবং মানসম্পন্ন বাস্তবায়নই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। মঙ্গলবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, তিনটি মেট্রোরেলের কাজ শেষ হলে একটি বড় উদাহরণ হবে। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। ঢাকা শহরের যানজট কমাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বায়ুদূষণ রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি চালানোর আগ্রহও কমে যেতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রকল্পগুলোর মানসম্মত সমাপ্তি এবং এর পর সঠিক ব্যবস্থাপনা। শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জনসচেতনতাও সৃষ্টি করতে হবে। বিদ্যুৎনির্ভর মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এবং জনগণকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর জোর দিতে হবে।

ফাস্টট্র্যাক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট লাইন-৬ (মেট্রোরেল)-এর কাজ। এটি ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অংশটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রকল্পটির অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গত তিন মাসে খরচ হয়েছে ৩৩৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।

তবে শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৩৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়: ডিপো এলাকার শতভাগ ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ত কাজ হয়েছে সাড়ে ৭৩ শতাংশ। উত্তরা নর্থ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন নির্মাণ কাজের ৭৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে।

আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত ৭টি স্টেশনের ৪৯ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছে। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমের কাজ হয়েছে সাড়ে ৪৬ শতাংশ। রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট এসেছে ৩০ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ বর্ধিত করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন । নতুন এ অংশের দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার।

প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন এবং নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত হচ্ছে এমআরটি লাইন-১। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এই রুটে ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার হবে মাটির নিচে এবং বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড। এর স্টেশনগুলোর মধ্যে ১২টি থাকবে মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে এলিভেটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৫৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন মাসে খরচ হয়েছে ১৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৪৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

মেট্রোরেল লাইন-৫ হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর-১, মিরপুর-১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২-নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এর আওতায় নর্দার্ন রুটের জন্য ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল তৈরি হবে।

এরমধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল এবং সাড়ে ছয় কিলোমিটার হবে এলিভেটেড। এ রুটে ১৪টি স্টেশনের মধ্যে নয়টি মাটির নিচে আর পাঁচটি হবে এলিভেটেড। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। তিন মাসে খরচ হয়েছে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তবে শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৭২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। গত ২১ জুন প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এ ছাড়া মেট্রোরেল লাইন-৫-এর আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে সাউদার্ন রুট শীর্ষক আরও একটি প্রকল্প। এই অংশ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪০৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১০০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি শূন্য দশমিক ০৮ শতাংশ।

মেট্রোরেল লাইন-১-এর আওতায় নির্মাণ হচ্ছে আরও একটি লিংক মেট্রোরেল। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৬০৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ২১০ কোটি টাকা। তিন মাসে খরচ ১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ২৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৪৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement