Ad Code

Responsive Advertisement

১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর একই সূত্রে গাঁথা

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জেলহত্যা দিবস পালিত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং জাতীয় চার নেতার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস পালিত হয়েছে।

এদিন আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন, পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাকে। এসব কর্মসূচিতে নেতারা বলেন, ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর একই সূত্রে গাঁথা। তারা পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর এবং জেলহত্যার রহস্য উন্মোচনের দাবি জানান।

মঙ্গলবার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতিকৃতি এবং বনানী কবরস্থানে জাতীয় তিন নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। একইভাবে রাজশাহীতে এএইচএম কামরুজ্জামানের কবরে দলীয় নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল ৮টায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর একই সূত্রে গাঁথা এবং একই চক্রান্তের ধারাবাহিকতা। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে এই দুটি কলঙ্কিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। অভিভাবকশূন্য করতে বঙ্গবন্ধু হত্যা আর নেতৃত্বশূন্য করতেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি জেলহত্যা সংঘটিত করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর কেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা, কর্নেল হায়দারসহ অসংখ্য সেনাবাহিনীর অফিসার, জওয়ানকে সিপাহি জনতার বিপ্লবের নামে হত্যা করা হয়েছিল, এর অনেক রহস্য এখনও উন্মোচন হয়নি। ইতিহাসে সত্যের স্বার্থে এবং আগামী প্রজন্মকে সব বিষয়ে জানাতে এ বিষয়টি উদ্ঘাটন করা দরকার।’

এ সময় বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দি, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, বিপ্লব বড়ুয়া, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, রিয়াজুল কবির কাওছারসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর আওয়ামী লীগ নেতারা রাজধানীর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদ এবং জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। বনানী কবরস্থানে পবিত্র ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন সড়কের কারা অভ্যন্তরে কারা স্মৃতি জাদুঘরে স্থাপিত চার নেতার প্রতিকৃতিতেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এ সময় স্থানীয় এমপি হাজী সেলিম, সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দিনের শুরুতে সকাল ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা তোলা হয়, দলীয় পতাকা থাকে অর্ধনমিত। কালো ব্যাজ ধারণ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুবলীগের শ্রদ্ধা ও খাবার বিতরণ : জেলহত্যা দিবসে ধানমণ্ডি ৩২ ও বনানী কবরস্থানে যুবলীগের পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

কৃষক লীগের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল : দিবসটি উপলক্ষে দুপুরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে কৃষক লীগ। এর আগে সকালে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতির নেতৃত্বে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দোয়া : দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহীউদ্দিন কাশেম।

৫ টাকা মূল্যমানের ডাটা কার্ড ও বিশেষ সিলমোহর প্রকাশ : দিবসটি উপলক্ষে ডাক অধিদফতর ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটা কার্ড ও একটি বিশেষ সিলমোহর প্রকাশ করেছে। এছাড়া দিবসটি স্মরণে ৫ টাকা মূল্যমানের ৫টি স্মারক ডাকটিকিটের সমন্বয়ে একটি সিটলেট ও ১০ টাকা মূল্যমানের একটি উদ্বোধনী খামও প্রকাশ করা হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তার দফতর থেকে স্মারক ডাকটিকিটের সমন্বয়ে সিটলেট ও উদ্বোধনী খাম অবমুক্ত এবং ডাটাকার্ড প্রকাশ করেন।

সহযোগী অন্য সংগঠনগুলোর কর্মসূচি : স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে দিনের প্রথম প্রহরে নেতাকর্মীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও বনানী গোরস্থানে শহীদদের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান সাইদ, সাধারণ সম্পাদক লায়ন শেখ আজগর লস্করসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সব নেতা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে এবং বনানী কবরস্থানে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, দিবসটি উপলক্ষে কাপাসিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। এতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বাবাকে হত্যার পর আমাদের পরিবারের সবাইকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা বেঁচে আছি। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও ৩ নভেম্বর জেলহত্যার মধ্য দিয়ে জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মহম্মদ শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রধান, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রওশনারা, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উদ্দীন সেলিম, যুবলীগ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন প্রধান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Post a Comment

0 Comments

Ad Code

Responsive Advertisement